Blog

চায়ের কাপে ঘুরে দাঁড়ানো অর্জুন দত্ত

সংগ্রামী বাবাদের এক প্রতীক

চায়ের কাপে ঘুরে দাঁড়ানো অর্জুন দত্ত, সংগ্রামী বাবাদের এক প্রতীক

খবরের অডিও ফাইলটি শুনতে নিচের প্লে-বাটনে ক্লিক করুন-

শফিকুল আলম শাহীন, পূর্বধলা (নেত্রকোনা) :নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা সদরের ডাকবাংলোর পাশেই ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। সারাদিন ভিড় লেগেই থাকে সেখানে। কেউ চায়ের কাপে চুমুক দেন, কেউবা আড্ডায় মেতে ওঠেন। দোকানের ভেতরে দাঁড়িয়ে গরম কেটলিতে চা ঢালছেন মাঝবয়সী এক মানুষ। মুখে ক্লান্তি থাকলেও চোখে অদ্ভুত এক তৃপ্তির ঝিলিক। তিনি অর্জুন চন্দ্র দত্ত- সংগ্রামী এক বাবা, যিনি শুধু চা বিক্রি করেই গড়ে তুলেছেন ছেলের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পথ।

উপজেলা সদরের উত্তর পূর্বধলা এলাকায় একটি সাধারণ পরিবারে অর্জুনের জন্ম । তার বাবা দুলাল চন্দ্র দত্ত মারা যাওয়ার পর সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে তার কাঁধে। এসএসসি পাস করা অর্জুন স্থানীয় একটি এনজিওতে পিওনের চাকরি নেন। কিন্তু মাস শেষে সামান্য বেতনে সংসারের খরচ চলছিল না।

প্রতিদিনের টানাপোড়েনে যখন মনে হচ্ছিল আর পারছেন না, তখনই তিনি নেন এক সাহসী সিদ্ধান্ত। নিজেই কিছু করবেন। চাকরি ছেড়ে দেন, খুলে বসেন চায়ের দোকান।

ডাকবাংলোর পাশের এই দোকানটিই হয়ে ওঠে তার সংসার চালানোর একমাত্র অবলম্বন। ভোর থেকে রাত অবধি গ্রাহকদের হাসিমুখে চা পরিবেশন করেন তিনি। নিয়মিত ক্রেতারা শুধু চা খেতেই আসেন না, তারা হয়ে উঠেছেন তার সাহস আর অনুপ্রেরণার অংশ। কেউ তার ছেলে মৃদুলের পড়াশোনার খবর নেন, কেউ আবার উৎসাহ দিয়ে বলেন, একদিন আপনার ছেলে অনেক বড় হবে, চিন্তা করবেন না।

অর্জুন বলেন,“প্রতিদিন দোকানে দাঁড়িয়ে মনে হতো, প্রতিটি কাপ চা বিক্রিই যেন ছেলেদের স্বপ্নপূরণের আরেক ধাপ।” বাবা-মা মারা যাওয়ার পর অর্জুনের সংসার বলতে স্ত্রী আর দুই ছেলে। জমিজমা বলতে শুধু ভিটেমাটি। কিন্তু সীমাবদ্ধতার ভেতর থেকেও তিনি কখনো ছেলেদের পড়াশোনায় ছাড় দেননি। বড় ছেলে মৃদুল দত্ত অন্তিম পড়াশোনায় সবসময়ই উজ্জ্বল।

পঞ্চম শ্রেণী থেকে এইচএসসি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই সে বৃত্তি পেয়েছে। এসএসসি ও এইচএসসিতে বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। এবছর তার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য-ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া।

এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকাজুড়ে আনন্দের ঢেউ। প্রতিবেশীরা অর্জুনের দোকানে ভিড় জমালেন। কেউ মিষ্টি নিয়ে এলেন, কেউ আবার কেবল অর্জুনের কাঁধে হাত রেখে বললেন, “আপনার কষ্ট বৃথা যায়নি।”

অর্জুনের চোখ ভিজে আসে আবেগে। তিনি বলেন, সন্তানদের  মুখের দিকে তাকিয়ে আমি দিনরাত পরিশ্রম করি। অন্তিম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ায় মনে হচ্ছে আমার সমস্ত কষ্ট সার্থক হয়েছে।

স্থানীয় শিক্ষক হারুন অর রশিদ খান  বলেন, “অর্জুন শুধু নিজের সন্তানকেই নয়, পুরো এলাকাকে গর্বিত করেছে। চায়ের দোকান চালিয়ে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে দেওয়া সহজ কাজ নয়। এটা সত্যিই অনুকরণীয়।”

ছোট ছেলে মুকুল দত্ত অমিত এখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। সংসারের খরচ আর ছেলেদের পড়াশোনা সামলানো এখনও তার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বড় ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সাফল্য তাকে নতুন আশার আলো দেখিয়েছে।

অর্জুন দত্তের গল্প শুধু পূর্বধলার নয়, গোটা দেশের সংগ্রামী বাবাদের এক প্রতীক। তিনি প্রমাণ করেছেন “ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম থাকলে কোনো কাজ ছোট নয়, আর স্বপ্নের কাছে অভাব বড় বাধা নয়।”

Shafiqul Alam Shahin

Web DeveloperGraphic Designer

A Passionate WordPress Web Developer 🖥️ & Graphic Designer having 5 years of experience across 8+ countries worldwide.

Category

Blog

Join the newsletter

Be the first to read my articles.

You have been successfully Subscribed! Ops! Something went wrong, please try again.

Similar Blogs

Have a Dream Project?

Let’s transform your vision into a stunning reality. Reach out today and start the journey to a remarkable brand presence.